এস এম শাহনূর
#প্রথম_পর্ব:
অখন্ড ভারতে জ্ঞান অর্জনের এক অসামান্য বাতিঘর কুমিল্লার রামমালা গ্রন্থাগারের প্রতিষ্ঠাতা ইতিহাসের এক রোমাঞ্চকর চরিত্র, বাংলার কৃতি সন্তান মহাত্মা দানবীর মহেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য(১৮৫৮- ১০ ফেব্রুয়ারী ১৯৪৪) ।”মানব জীবনে মহৎ উদ্দেশ্য সাধনে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশ ও জনগণের মঙ্গলের জন্য জীবন উৎসর্গ করে গেছেন, দানবীর মহেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য তাদের অন্যতম। কঠোর শ্রম, ন্যায়পরায়ণতা, অধ্যবসায়, আত্মবিশ্বাস এবং মহৎ আদর্শের ওপর নির্ভর করে তিনি নিতান্ত দরিদ্র অবস্থা থেকে জীবন সাধনায় সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।”১ একদা কঠোর দারিদ্র্যের জন্য লেখাপড়া করার সুযোগ না পেয়েও নিজের শ্রম আর মেধাকে ব্যবহার করে তিনি আলাদীনের চেরাগের গল্পের মতো দেখতে দেখতে প্রচুর ধন সম্পদের মালিক হন।পরবর্তীতে শিক্ষা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ায় মনোনিবেশ করেন।
মানবিক আদর্শের গুণাগুণ সম্পন্ন সম্পুর্ণ মানুষ মহাত্মা মহেশ চন্দ্র কে জীবদ্দশায় দেখা হয়নি আমার কিন্তু সেই তেজস্বী পুরুষের জীবন ও কর্ম- কান্ডের উত্তাপ দেহ মনে ছড়িয়ে গেছে সেই কৈশোরে।আমি দানবীর মহেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য কে ৭ বছর ধরে দেখেছি।যদি চিত্র শিল্পী হতাম এঁকে দিতাম তাঁর সেই ছবি।টানাটানা ভ্রমর কালো দুটো ভ্র,হালকা ক্রিমকালার ফতুয়া আর মোটা সাদা রঙের ধূতি পরিহিত বিজ্ঞচিত ভাব, পিড়িতে আসন পেতে বসে থাকা Oil Painting করা ছবিটি কাইতলা যঁজ্ঞেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে রক্ষিত ছিল।স্কুল জীবনে প্রতিক্লাসে প্রথম হওয়ার সুবাদে শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের স্নেহভাজন ছিলাম।প্রায় প্রতিদিনই প্রধান শিক্ষক মরহুম এম এস জামান স্যারের সাথে অফিস কক্ষে দেখা করতে যেতাম।(কখনো সখনো স্যার আমাকে ডেকে পাঠাতেন)স্যারের চেয়ারের পিছনেই টানানো ছিল কাঠের ফ্রেমে বাঁধাই করা ছবিটি।প্রিয় স্যার আমাকে হোম ওয়ার্ক দিতেন,নানান উপদেশমূলক গল্প শুনাতেন।শুনাতেন নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, দানবীর মহেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য, কাইতলা জমিদার বাড়ির ইতিহাস। কথার ফাঁকে আমিও ছবির মানুষটির সাথে কিছু কথা বলে নিতাম।দানবীর মহেশ চন্দ্র ভট্টাচার্যের জীবনী লেখার জন্য তথ্য সংগ্রহ ও পড়াশোনা শুরু করার আগে সেই ছবিটির ছবি সংগ্রহ করার চেষ্টা করতে গিয়ে বড় দুঃখ পেলাম।অফিস কক্ষের পুরানো দেওয়াল চুষে বৃষ্টির পানি,অযত্ন আর অবহেলায় ছবিটি নাকী নষ্ট হয়ে গেছে! জ্ঞানী, দয়ালু ও মহৎ প্রাণ মহেশ চন্দ্র আমার মানস পটে আঁকা।চলমান….
@➤তথ্য ঋণ:
[১] -গ্রন্থবর্ষ স্মারক গ্রন্থ ২০০২ , বাংলা একাডেমী, ইন্দু কুমার সিংহ লিখিত “রামমালা গ্রন্থাগারঃ কুমিল্লা” নিবন্ধ থেকে।
Leave a Reply